Blogroll

গোলক ধাঁধার চক্করে দেখে এলাম মুলাডলি


আমার মেজো সমুন্ধির বড় ছেলের বিয়ে। ডাক এলো দিনাজপুর থেকে, মেয়ের বাবা আসছে। তাই যেতে হলো। মেয়ের বাবা যথারীতি তাদের মেয়েকে দেখতে দাওয়াত করলেন চাঁপাই নবাবগঞ্জে। নির্দিষ্ট তারিখে খুব ভোরে আমরা মাইক্রোবাসে চাঁপাই এর উদ্দ্যেশ্যে রওয়ানা দিলাম। হিলি, জয়পুরহাট ও নওগাঁ হয়ে রাজশাহী পেরিয়ে আমরা জুম্মার নামাজের আগেই পৌঁছে গেলাম।

মেয়ে দেখা হলো, কথা বার্তা সব ঠিক হলো, বিয়ের দিন তারিখ ঠিক হলো। এবার ফেরার পালা। প্রায় পড়ন্ত বিকেলে আমরা দিনাজপুরের উদ্যেশ্যে যাত্রা শুরু করলাম। আমরা হিসেব করতে শুরু করলাম কতক্ষন সময়ে পৌঁছাবো। আসার সময় আমার মেজো সমুন্ধির বন্ধু মানুষ প্রাক্তন ইউপি মেম্বার ড্রাইভারকে নির্দেশ দিয়ে দিয়ে নিয়ে এসেছে। এবার ড্রাইভার বেশ অভিজ্ঞের মত জানালো তার কথা, সে তার মত করে আমাদের খুব সময়ে দিনাজপুর পৌঁছে দেবে। মেম্বার জানালেন রাস্তা চেনা থাকলে এগিয়ে যেতে।

সন্ধ্যা পার হয়ে গেছে আমরা নাটোর এসে সবাই চা নাস্তা করলাম। তারপর আবার গাড়ি চলতে শুরু করলো। নাটোর পার হয়ে বাইপাস সড়কের গোল চক্কর এলো। ড্রাইভার বেশ দ্রুত গতিতেই বাঁক নিয়ে চলতে শুরু করলো। সেই সময় মেম্বার বললেন দিনাজপুরের আঞ্চলিক ভাষায় “আবে ঠিক যাচিস তো” ড্রাইভার মাথা ঝাঁকিয়ে বলল ঠিক যাচ্ছে। গাড়ি বেশ মসৃণ রাস্তায় গতি নিয়ে এগিয়ে চলছে। তেমন গাড়ি চলাচল নেই। সারা দিনের ভ্রমণে সবাই ক্লান্ত। সংগে ছিলেন আমার বড় সমুন্ধি, মেজো সমুন্ধি ও তার আর এক বন্ধু এবং আমার ভাইরা। বড় সমুন্ধি প্রায় ঘুমিয়ে গেলেন। মেম্বার তখন বলে উঠলেন, রাস্তা এত ভাল হলো কবে? মেজো সমুন্ধিও বললেন তাই। মেজো সমুন্ধির বন্ধু আর একজন তার বাড়ি সিরাজগঞ্জ। সেও বলল এত ভাল হলো কবে। সবাই একটা ধুম্রজালের মধ্যে থাকলো। ড্রাইভার তার গতিতে এগিয়ে যেতে থাকলো। আমি সড়ক পথে তেমন এই দিকে আসিনি তাই আমি নিশ্চুপ বসে রইলাম।

অনেকক্ষন গাড়ি চললো। ক্লান্তিতে সবাই ঘুমিয়ে নিলো সবাই। কিছুক্ষন পর ট্রেনের হুইসেল শুনতে পেলাম সবাই। মেজো সমুন্ধি বলে উঠলেন এত তারাতারি বগুড়া এসে গেলাম। তখন মেম্বার বলে উঠলো তাই তো, আমাদের ড্রাইভার বেশ গাড়ি চালাতে পারে। কিছুদুর এগুনোর পর ট্রেন লাইনের গেট যাকে লেভেল ক্রসিং বলে সেখানে এসে গাড়ি থামলো। আমি অন্ধকারে সাইনবোর্ড জাতীয় কিছু দেখার চেষ্টা করলাম। এটা বগুড়ার কোন জায়গা নয়, পাবনা জেলার মুলাডলি নামক জায়গা। তখন মেজো সমুন্ধি আমাকে ও আমার ভাইরাকে নেমে জায়গাটি ভাল করে দেখে নিতে বলায়, আমরা নেমে দেখি হা প্রায় ঈশ্বরদীর কাছে মুলাডলি। আমরা নিশ্চিত হবার জন্য লোকজনকে জিজ্ঞেস করে যা জানতে পারলাম তা হলো আমরা ভুল পথে এসেছি। আবার পিছনে ফেরত গিয়ে নাটোর গিয়ে বগুড়ার সঠিক রাস্তায় এগুতে হবে। সবার চক্ষু চড়কগাছ। মেম্বার প্রচন্ড রেগে গেলেন এবং ড্রাইভার কে গাল মন্দ দিতে থাকলেন। তার কারণ মেম্বার চুক্তি করে এই গাড়ি নিয়ে এসেছেন। ড্রাইভার নিছক ছেলে মানুষ। সে মাথা নিচু করে আরও দ্রুত বেগে পিছনে যেদিক দিয়ে এসেছিলাম সেই দিকে ফেরত যেতে লাগলো। তার চাকুরী হারাবার ভয় পেয়ে বসলো। কারণ গাড়ির মালিক মেম্বার এর বন্ধু মানুষ। আমরা সবাই তাকে সতর্ক ভাবে গাড়ি চালাতে বললাম। এক সময় সেই নাটোরের গোল চক্করে এসে নেমে গিয়ে ভাল করে দেখে শুনে বগুড়ার রাস্তার দিকে এগুতে থাকলো। বগুড়ার রাস্তায় এলে গাড়ির গতি এমনিতেই কমে এলো, কারণ রাস্তা বেশী ভাল নয়। তখন মেম্বার বললেন, তখনি তার সন্দেহ হয়েছিল আমরা ভুল পথে যাচ্ছি।
map 2

অবশেষে রাত দুইটায় আমরা দিনাজপুর পৌঁছুলাম। মাঝখানে দেখে এলাম মুলাডলি। ড্রাইভার তার তেলের হিসেব দিতে পারবেনা বিধায়, আমাদেরকে গাড়ির ট্যাংক সঠিক রাখতে ও তার চাকুরী বাঁচাতে অতিরিক্ত তেল কিনে দিতে হলো।

আজ হটাত করেই মনে হলো সেই মুলাডলিকে, কারণ ট্রেনে ঢাকায় যেতে এই মুলাডলি রেল স্টেশন সেই লেভেল ক্রসিং পার হতে হয়।


উপলদ্ধি- লক্ষ্যে পৌঁছাতে গেলে ধির স্থির ভাবে পদক্ষেপ নেয়া উচিত।  
- মোঃ জাকির হোসেন
২৫.০৮.২০১৪ 
These icons link to social bookmarking sites where readers can share and discover new web pages.
  • Digg
  • Sphinn
  • del.icio.us
  • Facebook
  • Mixx
  • Google
  • Furl
  • Reddit
  • Spurl
  • StumbleUpon
  • Technorati

Leave a comment

Admaya