Blogroll

“মহাত্মা” “বাউল সম্রাট” লালন ফকির


বাড়ীর কাছে আরশী নগর,
সেথাই এক ঘর পড়শী বসত করে,
আমি একদিনও না চিনিলাম তারে।।
লালনের এ গান গুলো কার না ভাল লাগে। দেখেছি যখন লালনের গানের সুর কোথাও থেকে ভেসে আসলে আশেপাশের লোকজন নিবিষ্ট মনে সেই সুর ও কথা গুলিকে শুনতে। আগে লালনের গানের সুর ও কথা বিভিন্ন বাউলের একতারা কিংবা দোতারাতে, কন্ঠে গ্রাম বাংলার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও তা এখন ধীরে ধীরে আমাদের বাংলাদেশের নগর সভ্যতায় বেশ পাকা পোক্ত স্থান করে নিয়েছে। অপ সংস্কৃতির জোয়ারে বাংলার লোক সংস্কৃতিকে গ্রাস করার উপক্রম হলেও লালনগীতি আজো উজ্জল হয়ে আছে বাঙ্গালীর মনন ও মানসে। তাই লালন আমাদের বাঙ্গালী জাতির সংস্কৃতির একটি অংশ। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে লালনকে নিয়ে চলছে বিভিন্ন ধরনের গবেষণা। তার মানবতাবাদী গানের কথা, সুর এই উপ মহাদেশের হিন্দু ও মুসলিম জাতির মধ্যে যখন সাংঘর্ষিক রুপে দেখা যাচ্ছিল তখন লালন গানের মাঝে তৈরি করেছিলেন আশ্চর্য মিলনের সুর।
 (লালন)
তোরা আয় না মনে খাঁটি হয়ে/
ধাক্কায় যেন যাসনে চোটে ফেটে/
কে যাবি গৌর প্রেমের হাটে?
সমাজের অসঙ্গতি, সাম্প্রদায়িকতা, মানুষে মানুষে অযথা হানাহানি দূর করে চিরন্তন মানবধর্ম প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন লালন। মানুষকে প্রকৃত মানুষ হওয়ার আহবান জানিয়েছেন, তার এই গানে-
জাত গেল জাত গেল বলে,
একি আজব কারখানা
সত্য কাজে কেউ নয় রাজী।
সবি দেখি তা - না - না- ।
প্রকৃত পক্ষে তিনি ছিলেন একজন মানবতাবাদী। তাই অসাম্প্রদায়িক। প্রচলিত সব ধর্মের অন্তর্নিহিত বানী হচ্ছে- শান্তি, মঙ্গল কামনা। তাই লালনের দর্শনের মূল কথাই হচ্ছে মানুষ। আর এই দর্শন প্রচারের জন্য শিল্পকে বেছে নিয়েছিলেন। লালন সব সময় প্রমান করেছেন তার গানে- সবার উপরে মানুষ সত্য। অনেকেই লালনকে পরিচয় করিয়ে দেবার চেষ্টা করেছেন সাম্প্রদায়িক দৃষ্টি ভঙ্গি দিয়ে। কেউ তাকে হিন্দু, আবার কেউবা তাকে মুসলমান হিসেবে পরিচয় করাবার চেষ্টা করেছেন। আর লালন তার সারা জীবন এই জাত পাতের বিরুদ্ধে নিজের গানকে অস্ত্র হিসেবে দাঁড় করিয়েছিলেন এই সমাজে। তার প্রমান পাওয়া যায় তারই গানে-
 (লালনের গানের অনুষ্ঠান)
সব লোকে কয়
লালন কি জাত সংসারে,
লালন বলে জাতির কি রুপ
দেখলাম না এই নজরে।।
লালনের জন্ম ও মৃত্যু সাল নিয়ে দেখা যায় বিভিন্ন লেখকদের উপস্থাপনায় ভিন্নতা। তবে বেশীর ভাগ লেখক ও গবেষক তার জন্ম সাল ১৭৭৪ খৃস্টাব্দ কে উল্লেখ করেছেন এবং তার মৃত্যু হয়েছিল ১৮৯০ সালের ১৭ অক্টোবর। ভারতীয় উপ মহাদেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী আধ্যাত্মিক সাধকদের মধ্যে অন্যতম লালন। তিনি একাধারে বাউল সাধক, গীতিকার, সুরকার, ও গায়ক। তাকে "বাউল সম্রাট" হিসেবেও অভিহিত করা হয়। গান্ধীরও ২৫ বছর আগে ভারত উপমহাদেশে সর্বপ্রথম তাকে "মহাত্মা" উপাধি দেয়া হয়েছিল। তার মৃত্যুর ১২ দিন পর তৎকালীন পাক্ষিক পত্রিকায় মীর মোশারফ হোসেন সম্পাদিত হিতকরীতে প্রকাশিত একটি রচনায় সর্বপ্রথম তাকে “মহাত্মা” হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। মীর মোশারফ হোসেন তখন ছদ্মনাম রাইচরন হিসেবে লিখতেন।
 (মীর মোশারফ হোসেন)
 লালন একজন বাঙ্গালী। যার জন্মস্থান বর্তমান বাংলাদেশের ঝিনাইদাহ জেলার হরিণাকুন্ড উপজেলার হরিশপুর গ্রামে। তিনি হিন্দু পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তার মাতার নাম পদ্মাবতী, মাতামহের নাম ভীমদাস। লালন যে পাড়ায় বাস করতেন, সে পাড়ার নাম দাসপাড়া । অল্প বয়সে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর তিনি তীর্থ যাত্রা করেন। ফেরার পথে তিনি বসন্ত রোগে আক্রান্ত হলে, সঙ্গীরা তাকে পথে ফেলে বাড়ি চলে যায় এবং তার মৃত্যু সংবাদ রটিয়ে দেয়। এ সময় এক মুসলমান স্ত্রীলোক লালনকে গৃহে নিয়ে চিকিৎসা ও সেবা দেন সিরাজ সাই সহ। সে সময় লালন তার একটি চোখ হারান। তখনই লালন শাহ সিরাজ সাইয়ের সান্নিধ্যে আসেন। তিনি সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরলে মুসলমান ঘরে অন্ন খেয়েছেন বলে তার পরিবার তাঁকে আর গ্রহণ করেনি। এতে লালনের চিত্তে বৈরাগ্য দেখা দেয়। শেষ পর্যন্ত তিনি আশ্রয়দাতা সাধক সিরাজ সাইয়ের কাছে ফিরে আসেন ও তাঁকে গুরু পদে বরণ করেন। *১৮২৩ সালের দিকে কুষ্টিয়া রেল ষ্টেশনের এক মাইল পূর্বে ছেউড়িয়া নামক পল্লীতে বসবাস শুরু করেন ও আখড়া তৈরি করেন। ১৮৯০ সালের ১৭ অক্টোবর তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন ও এই ছেউড়িয়া গ্রামেই  লালন শাহকে কবরস্থ করাহয় এবং সেখানেই  লালনের মাজার গড়ে ওঠে। তিনি প্রায় ২০০০ গান রচনা করেছেন। নিঃসন্তান লালন বিশাখা নামের এক বোষ্টমিকে মালা বদল করে বিয়ে করেছিলেন। এ মহিলা তার সেবা করতেন। লালন শাহ দীর্ঘ ১১৬ বছর বেঁচে ছিলেন। তিনি অশ্বারোহণ করে নানা স্থানে যেতেন। মৃত্যুর ১ মাস পূর্বে তার পেটের অসুখ হয়। অসুস্থ্য অবস্থায় তিনি দুধ ছাড়া অন্য কিছু খেতে পারতেন না। পীড়িত অবস্থায় পরমেশ্বরের নাম স্মরণ করতেন। প্রায়ই গানে উন্মত্ত থাকতেন। ধর্মের আলাপ করলে তিনি রোগ যাতনা ভুলে যেতেন। মৃত্যুর পূর্ব রাতে ভোর ৫ টায় তিনি শিষ্যদের বললেন, “আমি চললাম” । তার মৃত্যুর পর বিশাখা বেঁচে ছিলেন। লালনের আখড়াতেই তার সমাধি আছে। (* ডক্টর রামদুলাল রায়, বাঙ্গালীর দর্শন, প্রচীনকাল থেকে সমকাল, একাদশ অধ্যায়, লালন শাহের দর্শন, পাতা- ১৭৯-১৮২)
 (লালনের মাজার)
লালনের দীর্ঘ জীবন ইংরেজ শাসনের গুরত্বপূর্ণ সময়কে স্পর্শ করেছে। লালনের সময়েই ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে অসন্তোষ দানা বেধে ওঠে। ঐ সময় ঘটেছে ওহাবী ফরায়জী আন্দোলন, নীল বিদ্রোহ ইত্যাদি। রামমোহন রায় এর ব্রাহ্ম ধর্মের সৃষ্টিও ঐ সময়ে। রাজা রামমোহন রায়,রাধাকান্ত দেব,ডিরজিও, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্যাসাগর, অক্ষয় কুমার দত্ত, মধুসদন, রামকৃঞ্চ পরমহংসদেব, কেশবচন্দ্র সেন, বঙ্কিম চন্দ্র এর মত ব্যাক্তিদের সম্বনয় ঘটেছিল সে সময়।
নাগরিক জীবনে উনিশ শতকে বাংলার সামাজিক ও সাহিত্যিক পরিবেশে যখন রামমোহন, বিদ্যাসাগর, অক্ষয় কুমার দত্ত প্রমুখ এক আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন ঠিক তখনই অবিভিক্ত বঙ্গ দেশের পল্লী অঞ্চলে লালন ফকির, পাগলা কানাই, কাঙ্গাল হরিনাথ সহ আরও কেউ কেউ প্রধানত সঙ্গীতের মাধ্যমে লৌকিক জীবনে যে বিপ্লব এনেছিলেন তার ইতিহাস অনেকটা উপেক্ষিত।
উনিশ শতকের মহাজাগরনের কর্মকান্ড ছিল কোলকাতা কেন্দ্রিক বা মহানগর কেন্দ্রিক। অপর দিকে লালন ছিলেন গ্রামের মানুষ। আলোকিত হওয়ার মত প্রাতিষ্টানিক শিক্ষা তার ছিল না। তারপরও লালনের সাধনা, সঙ্গীত, দর্শন সাধারণ মানুষের মধ্যে বিস্ময়কর জাগরণের জোয়ার তুলেছিল। আর এই জোয়ার রাজা রামমোহনের সমাজ জাগরণের চেয়ে কোন অংশে কম ছিল না। জাত ধর্ম নির্বিশেষে দলে দলে তখনকার সমাজের অনেক শিক্ষিত মানুষও লালনের মানবতত্বের দিকে ঝুঁকে পড়েন। সমকালীন চিন্থায় তাই লালন বাঙ্গালীর মানসপটে এক ব্যতিক্রমী আবির্ভাব।
রবীন্দ্রনাথই লালন চর্চার পথিকৃৎ এবং তিনি প্রথম লালনকে পরিচয় করিয়ে দেন- বিদগ্ধ সমাজে এমন জনশ্রুতি আছে। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের প্রায় অর্ধ শতাব্দী পূর্ব থেকেই লালন প্রচার ও চর্চার প্রমান পাওয়া যায়। রবীন্দ্রনাথের আগে যারা লালন চর্চা করেন তাদের মধ্যে কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার, জলধর সেন, উকিল রাইচরন দাস, সরলা দেবী, মৌলভী আব্দুল ওয়ালী, দুর্গাদাস লাহিড়ী, অনাথ কৃষ্ণ দেব, কুমুদনাথ মল্লিক, মীর মোশারফ হোসেন ও করুণাময় গ্বোসামী প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।
 (কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
রবীন্দ্রনাথ কুষ্টিয়ার শিলাইদহে জমিদারী পরিচালনা করতে এসে বাউল ফকির বৈধবদের সংস্পর্শে আসেন। *লালনের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের দেখা হওয়ার প্রমান পাওয়া যায় “ছিন্ন পত্রের” একটি চিঠির অংশ বিশেষে। এটাও প্রমান করে যে লালনের পার্থিব দেহের একমাত্র প্রতিকৃতিটি রবীন্দ্রনাথের বড় ভাই জ্যোতিরন্দ্রনাথ ঠাকুর এঁকেছিলেন, লালনের অন্তিমকালে জ্যোতিরন্দ্রনাথ যখন এই ছবি আঁকেন তখন রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহ থাকতেন বলে অনুমান করা হয়।(*লালন শাহ ও তৎকালীন বাঙ্গালী সমাজ, অধ্যাপক মুহম্মদ আবু তালিব, লালন শাহ মৃত্যু শত বার্ষিকী স্মারক গ্রন্থ, ১৯৯২ পৃ - ২৯)। 
 (লালনের পার্থিব দেহের স্কেচ)
বিশেষ করে সঙ্গীত পাগল রবীন্দ্রনাথের কুঠিবাড়ীতে লালনের অবাধ যাতায়ত ছিল এবং *মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লালনকে তাহাদের শিলাইদহের কাছারিতে ডেকে নিয়ে তাহার কাছে দেহতত্ব গান ও ধর্ম কথা শুনিয়া আনন্দ লাভ করিতেন।(*কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার স্মারকগ্রন্থ,১৯৯৮ পৃ-১০৮)। রবীন্দ্রনাথের সেই মনোরম গ্রাম্য পরিবেশে লালনশাহী ফকির সমাজের একতারা তার কবি মানসকে কিভাবে সংগঠিত করে তুলেছিল। আর তিনি একের পর এক অপূর্ব কাব্য ফসলে বাংলা সাহিত্যের অঙ্গনে সমৃদ্ধ করে তুলেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ লালনকে উপনিষদের ঋষির সঙ্গে তুলনা করেছেন। লালন রবীন্দ্রনাথকে সম্মোহিত করেছিলেন। তাই রবীন্দ্র সাহিত্যে, নাটকে, গানে লালনের সুদূর প্রসারী প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। রবীন্দ্রনাথ তাই দায়িত্ব মনে করে লালনকে জাতীয় ও আন্তরজার্তিকভাবে লালনকে তুলে ধরেছেন, শিলাইদহ অবস্থানকালে লালন শাহের কাছ থেকে ২৯৮টি গান সংগ্রহ করে ২০টি গান প্রবাসী প্রত্রিকায় প্রকাশ করেন। সেখান থেকেই শিক্ষিত সমাজে লালনের পরিচয়।
 (শিলাইদহ কুঠিবাড়ী)
রবীন্দ্রনাথই প্রথম ও জাতীয় ও আন্তজার্তিকভাবে লালনকে পরিচিতি করে তুললেও কাঙ্গাল হরিনাথই প্রথম লালনকে জনসম্মুখে নিয়ে আসেন। লালনের সঙ্গে পরিচয়ের অনেক আগেই লালন ফকিরের পরিচিতিমূলক আলোচনা মুদ্রণ আকারে রচনা প্রথম প্রকাশিত হয় "গ্রামবার্তা" প্রকাশিকায়। এরা একে অন্যের আখড়ায় যেতেন। কুমারখালীতে হরিনাথের বাসস্থান থেকে লালনের সাধন পীঠ ছেউড়িয়ার দূরত্ব ১০/১২ কিঃমিঃ। "ফিকির চাদের বাউল দল" গঠিত লালনের প্রভাবেই। প্রত্যক্ষদর্শী জলধর সেনের রচনা থেকে জানা যায় ১৮৮০ সালে গ্রীষ্মের এক সকালে লালন কাঙ্গাল কুঠিরে এসে শুনিয়েছিলেন কয়েকটি গান। সেখানে কাঙ্গাল হরিনাথ সহ জলধর সেন, অক্ষয় কুমার মৈত্রয় এবং গ্রামবার্তা সাময়িকীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আরও কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন।
কাঙ্গাল হরিনাথ তার বাউল দল নিয়ে প্রথমে কুমারখালী এবং পরে সফর করেন অবিভক্ত বঙ্গ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। দলের প্রধান গান রচয়িতা কাঙ্গাল হরিনাথ হলেও দলের অন্য এক শিষ্য কথা শিল্পী মীর মোশারফ হোসেন দলের প্রভাবে বেশ কিছু গান লেখেন। পরে "সঙ্গীত লহরী" নামে মীর মোশারফ হোসেনের একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। এই গ্রন্থের একটি গানে লালনের একটি গান আছে। তবে এর আগে কাঙ্গাল হরিনাথ তার "ব্রম্মান্ডদেব" গ্রন্থে লালনের একটি গান সংগ্রহ করে তা মুদ্রণ করেন। এটিই লালনের গানের প্রথম মুদ্রণ।
কাঙ্গাল হরিনাথের বিপদের দিনেও লালন ছিলেন তার একান্ত আপনজন। "গ্রামবার্তা" প্রকাশিকায় দ্বারকানাথ ও দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের আমলে প্রজাপীড়নের বিরুদ্ধে তথ্যমূলক সংবাদ প্রকাশের কারণে শিলাইদহের জমিদারের আমলারা হরিনাথের বিরুদ্ধে মামলা করা সহ নানা রকম হেনস্তা করেন। প্রথমে নানা ভাবে প্রলোভন দেখিয়ে তাঁকে বশ করার চেষ্টা করা হয়, কিন্তু না পেরে একদিন রাতে হরিনাথের বাড়ীতে আক্রমণ করে তারা। সেদিন লালন ফকির স্বয়ং লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে শিষ্যদের নিয়ে আক্রমণ প্রতিহিত করে হরিনাথকে বাঁচিয়েছিলেন। কাঙ্গাল হরিনাথ তার অপ্রকাশিত "দিনলিপিতে" কৃতজ্ঞচিত্তে সেই বিবরণ লিপিবদ্ধ করেছেন।
লালন শাহকে জাতের কথা বললে তিনি হাসতেন। তিনি বলতেন "আমার জাতের কথা আমার মা বলতে পারবেন"। ডঃ আনোয়ারুল করিম লালন একাডেমীর পরিচালক থাকাকালীন সময়ে (১৯৭৩) লালন ফকিরকে দেখেছেন এমন দুইজন ব্যাক্তির সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন। এদের মধ্যে একজন আইন উদ্দীন মণ্ডল ও আরেকজন শের আলী মণ্ডল। আইন উদ্দীনের বয়স তখন ৯৩ বছর। তিনি ১০/১১ বছর বয়সে লালন শাহকে দেখেছেন বলে স্বীকার করেন। লালন শাহ কোন জাতের মানুষ তা কেউ বলতে পারতো না। কেউ তাঁকে নামাজ পড়তে দেখেনি এবং তার মুখে বসন্তের দাগ ছিল। শের আলী মণ্ডলের বাড়ী ছেউড়িয়ার পার্শ্ববর্তী গ্রামে জয়নাবাদ। তখন তার বয়স ১৩০ বছর। তিনিও অনুরূপ বক্তব্য দেন কুষ্টিয়ার দুজন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর ও দুইজন ১ম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে। তারা আরও জানান লালন শাহ কপিন ও  গেরুয়া ধরনের বসন পরিধান করতেন।
 (লালন)
প্রতি বছর দোল পূর্ণিমা ও মৃত্যু বার্ষিকীতে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ছেউড়িয়া গ্রামে লালনের আখড়ায় লালনের মাজারে সাধু সেবা ও সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে লালন অনুরাগীরা এ স্থানে এসে লালনকে শ্রদ্ধা জানান। কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসন ও লালন একাডেমী আয়োজন করে "লালন মেলা"।
 (লালন মেলা)
পাকিস্থান আমলে মোনেম খাঁর সাঙ্গ পাংগরা সাম্প্রদায়িক দৃষ্টি ভঙ্গি নিয়ে  প্রতিষ্টা করতে চেয়েছিল, লালন মুসলমান।
লালন বাঙ্গালী সংস্কৃতির একটি বড় উপাদান ও ঐতিহ্য। তার ধারক বাহক বাউলরা। এখানে বছরে দুবার মেলা করে, গান বাজনা করে, লালনের অসাম্প্রদায়িক ও ইহজাগতিক চেতনাকে ধারণ করা যাবেনা। স্থানীয় ভাষায় গান লিখে ঔপনিবেশিক সংস্কৃতিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন তিনি। আমাদের জাতীয় সংস্কৃতির সঙ্গীত বাউল সুরে। অর্থাৎ এটা আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি।
বাঙ্গালীর সংস্কৃতি চর্চায় লালনকে যে ভাবে আনা উচিত ছিল, সেভাবে আনা হয়নি। হাতে গোনা কয়েকজন লালনকে নিয়ে চর্চা করেছেন। লালনের অসাম্প্রদায়িক চেতনা, মানবতাবাদ, কুসংস্কার ও জাতিভেদের বিরুদ্ধে যে আহবান আজও সমাজে গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। আজও লালন রহস্যময়তায় ঢাকা। নিজের শেকড় কে চেনার এইতো সময়। আশাকরি দার্শনিক ও গবেষকগণ লালন কে নিয়ে আরও বেশী চর্চা করে ছড়িয়ে দিবেন মানবজাতির চেতনায়।
লালনের কিছু গানের ডাউনলোড করার লিঙ্ক
তানভীর মোকাম্মেল এর লালন ছবিটি এখান থেকে ডাউনলোড করে নিতে পারেন- ১ম অংশ, ২য় অংশ, ৩য় অংশ, ৪র্থ অংশ, ৫ম অংশ৬ষ্ট অংশ
লালন কে নিয়ে চলচিত্র "মনের মানুষ" এখান থেকে ডাউনলোড করুন
ধন্যবাদ সহ-
মোঃ জাকির হোসেন
০৩.১০.২০১১
আমার যত লেখা পিসি হেল্পলাইন বিডিতে পাবেন।
These icons link to social bookmarking sites where readers can share and discover new web pages.
  • Digg
  • Sphinn
  • del.icio.us
  • Facebook
  • Mixx
  • Google
  • Furl
  • Reddit
  • Spurl
  • StumbleUpon
  • Technorati

Leave a comment

Admaya